কি খেলে পুরুষের বীর্য গাঢ় হয় ?

আজকে আলোচনা করবো পুরুষ শরীরের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ন বিষয় নিয়ে, তা হলো বীর্য। আজকে আমরা জানবো বীর্যের ঘনত্ব বাড়াতে আমরা কি কি খাবার গ্রহণ করতে পারি। চলুন শুরু করা যাক। বীর্য হচ্ছে একটু জৈবিক তরল যা যৌনসঙ্গমের শেষ পর্যায়ে পুরুষাঙ্গ হতে নিঃসৃত হয়। এর কার্যক্ষমতা হচ্ছে শুক্রাণু সমৃদ্ধ পুরুষের বীর্য নারীর ডিম্বাণুর সাথে মিলিত হয় এবং জরায়ুতে মানব ভ্রূণের জন্ম দেয়।

বীর্য কি হতে পারে অস্বস্তিকর দাম্পত্য জীবনের কারন ?

বিবাহিত জীবনে আপনি স্বাস্থ্যকর এবং যৌনশক্তি তে পালোয়ান হলে আপনার দৈনন্দিন দাম্পত্য জীবন সুখের যাবে । সুস্থ দাম্পত্য জীবনের জন্য স্বামী – স্ত্রীর মাঝে ভালো বোঝাপড়া থাকার পাশাপাশি প্রয়োজন স্বাস্থ্যকর যৌণ জীবন। বিবাহিত জীবনে যৌনতায় আনফিট থাকলে আপনি জীবন যুদ্ধে একধাপ পিছিয়ে থাকবেন। এছাড়াও এর সাথে আপনার নিজের স্বাস্থের ক্ষেত্রেও কিছুটা অসুবিধার।

মানুষের শারীরিক অবস্থা অনুযায়ী একেক জনের বীর্যের ঘনত্ব একেক রকম হয়ে থাকে। কারো টা পাতলা হয় আবার টা ঘন । তবে সব পুরুষেরই আকাঙ্ক্ষা ঘন বীর্য পাওয়ার। কেননা ঘন বীর্য সুস্থ, স্বাভাবিক শারীরিক অবস্থার সিম্বল। অনেক সংসারেই প্রায়ই দেখা যায় বীর্য নিয়ে যৌণ সমস্যার কারণেও সংসারে অশান্তি হয় । আপনারা জানলে অবাক হবে কোনো কোনো সংসারে বিচ্ছেদ ও হয়।

অনেক দাম্পত্য জীবনেই এইসব বিষয় নিয়ে কলোহ তৈরি হয় , কিন্তু বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যায় যৌণ সমস্যা নিয়ে কেউ কোনো আলোচনা করতে লজ্জা পায়। আবার নানা প্রকার কুসংস্কারে বিশ্বাস করে লুকিয়ে চিকিৎসা নিতে গিয়েও অনেকে প্রতারিত হয়েছে। এছাড়াও এতে স্বাস্থ্য ঝুঁকি ও রয়ে যায়। আমাদের সমাজে বিশেষ করে গ্রাম অঞ্চলে তথাকথিত হারবাল , কবিরাজ ও ভেষজ নামধারী ভুয়া যৌণ ডাক্তার দের তো আর অভাব নেই।

তবে কেন পুরুষের বীর্য পাতলা হয় ?

বীর্য অনেক কারণেই পাতলা হতে পারে। যেমন- প্রতিদিনের খাবারে অনিয়ম , অতিরিক্ত হস্তমৈথুন , ধূমপান , মদ্যপান , অতিরিক্ত চিন্তা ও মানসিক চাপ, অনিদ্রা ইত্যাদি কারণে পুরুষের বীর্য পাতলা হতে পারে। তবে হ্যা! পুষ্টিকর ও সুষম খাবার গ্রহণ এছাড়াও নিয়ন্ত্রিত জীবনযাপনের মাধ্যমে বীর্যের ঘনত্ব বাড়ানো সম্ভব বলে মনে করেন গবেষকরা।

পুরুষের বীর্য পাতলা হলে কি ধরনের সমস্যা দেখা দিতে পারে ?

বর্তমানে ব্যস্ত জীবনযাত্রায়, অনিয়মিত ডায়েট এবং স্ট্রেসের কারণে বীর্য পাতলা হওয়া খুবই সাধারণ একটি সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। কিন্তু চিন্তার বিষয় হল, বীর্য পাতলা  হওয়ার সমস্যা দিনে দিনে বেড়েই যাচ্ছে। বীর্য পাতলা হলে শুক্রানুর কাউন্টিং কম হয় , পুরুষত্বহীনতা দেখা যায় এবং সন্তান জন্মদানে জটিলতা থাকে। পরিসংখ্যান বলছে ৩০-৫০ শতাংশ বন্ধ্যাত্বের জন্য দায়ি পুরুষেরাই। কিন্তু এর চিকিৎসা অবশ্যই আছে, তবে তা একটু ব্যয় সাপেক্ষ।

তাহলে উপায় কি? বিভিন্ন লোভনীয় বিজ্ঞাপন দেখে বিভিন্ন ওষুধ সেবন না করে স্পার্ম কাউন্ট বাড়াতে ডায়েটে রাখুন বিভিন্ন প্রাকৃতিক খাবার যাতে ভালো ফল পাবেন ,থাকবেনা কোন ঝুঁকি । এরপরেও সমধান না পেলে দ্রুত বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।

বীর্য ঘন করার উপায় কি কি ?

পুস্টিকর খাদ্যাভ্যাস , নিয়ন্ত্রিত জীবনযাপন ও নিয়মিত পুষ্টিকর খাবার খেলে স্বাভাবিক ভাবেই বীর্য ঘন হয় । তবে এখানে বিশেষ কিছু খাবার আছে যা খেলে শরীরের অন্যান্য সুবিধা সহ বীর্য ঘন করতেও সহায়ক। নিচে এই খাবার গুলোর ব্যাপারে আলোচনা করা হলো যা খেলে আপনার বীর্য ঘন হবার সাথে সাথে শুক্রানুর পরিমান বৃদ্ধি পাবে।

১.টমেটো

টমেটো আমাদের সুপরিচিত একটি সবজি যার মধ্যে রয়েছে লাইকোপেন। টমেটোতে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট শুক্রাণুর গুণগত মান বাড়াতে কাজ করে। টমেটো রান্নার ক্ষেত্রে জলপাইয়ের তেলও দিতে পারেন এতে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট শোষণ ভালো হয়।

২.পালং শাক

আপনি কি জানেন? পালং শাকে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন বি-৯ রয়েছে। সক্রিয় শুক্রাণুর জন্য এই ভিটামিন বি-৯ খুবই জরুরি। এটি শুক্রাণুর কার্যকারিতা বাড়াতে সাহায্য করে। তাই দেরি না করে খাবার তালিকায় রাখুন পালং শাক।

৩.আখরোট বা ওয়ালনাট

আখরোট এক ধরনের সুস্বাদু বাদাম। আখরোট এর  মধ্যে রয়েছে ওমেগা থ্রি ফ্যাটি এসিড। সোসাইটি ফর দ্য স্টাডি অব রিপ্রোডাকশনের এক গবেষণায় বলা হয়, প্রতিদিন ৭০ গ্রাম ওয়ালনাট খাওয়া ২১ থেকে ৩৫ বছরের পুরুষের ক্ষেত্রে শুক্রাণুর জীবনীশক্তি বাড়ায়। আখরোট সালাদের সঙ্গে খেতে পারেন।

৪.ব্রকলি

শীতকালীন সবজি হলেও সবুজ ফুলকপির মত দেখতে ব্রোকোলি ১২ মাস পাওয়া যায়। ব্রোকোলিতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন বি-৯। এটি শুক্রাণুর কর্মক্ষমতা অনেকটাই বাড়িয়ে দেয়। বিশেষজ্ঞদের মতে, নিয়মিত ব্রোকোলি খেলে স্পার্ম কাউন্ট প্রায় ৭০ শতাংশ বৃদ্ধি পায়। 

 ৫.কুমড়ো বীজ

বিশেষজ্ঞদের মতে, কুমড়ো বীজে থাকা উপাদান টেসটোসটেরোন হরমোনের সিরামের মাত্রা বাড়ায়। এ ছাড়া শুক্রাণুর মাত্রা, জীবনীশক্তি, ক্ষিপ্রতা বাড়াতে কাজ করে। কুমড়ো বীজের মধ্যে রয়েছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, প্রয়োজনীয় অ্যামাইনো এসিড ও ফাইটোসটেরল। এ খাবারটি পুরুষের প্রজনন ক্ষমতা বাড়াতে কাজ করে। 

আরো জানুন: সত্যি কি মেয়েদের স্বপ্নদোষ হয় ?

৬.ডিম

ডিম যৌন দূর্বলতা দূর করতে ও যৌন উত্তেজনা এবং বীর্য বাড়াতে এক অসাধারণ খাবার ডিম। প্রতিদিন সকালে ১টি করে ডিম সিদ্ধ করে খান এতে আপনার যৌন দুর্বলতার সমাধান হবে।

৭.আনার

আনার আমাদের পরিচিত একটি ফল যার মধ্যে রয়েছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। বিশেষজ্ঞদের মতে, আনার টেসটোসটেরন ও শুক্রাণুর গুণগত মান বাড়াতে উপকারী।

৮.রসুন

আপনার যৌন সমস্যা থাকলে এখনই নিয়মিত রসুন খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন। নারী ও পুরুষ উভয়েরই যৌন উদ্দীপনা বাড়াতে এবং যৌনাঙ্গ কে পূর্ণ সক্রিয় রাখতে রসুনের পুষ্টিগুণের কার্যকারিতা সর্বজনস্বীকৃত। বিশেষজ্ঞদের মতে, রসুনে রয়েছে ভিটামিন বি-৬ ও সেলেনিয়াম যা পুরুষদের উর্বরতা বাড়াতে সাহায্য করে।

আরো জানুন: কামরস বা যোনিরস বের হবার কারণ কি ?

৯.মধু

পুরুষের যৌন দুর্বলতার সমাধানের মধুর গুণের কথা সবারই কম-বেশি জানা। তাই যৌন শক্তি বাড়াতে প্রতিদিন রাতে ১ গ্লাস কুসুম গরম পানিতে ১ চামচ খাঁটি মধু মিশিয়ে পান করুন এতে আপনি উপকার পাবেন।

১০.ডার্ক চকলেট

যারা চকলেট পছন্দ করেন তাদের জন্য সুখবর এই যে ডার্ক চকলেট শুক্রাণুর কর্মক্ষমতা বাড়াতে খুবই কার্যকরী একটি খাবার। কালো অথবা ডার্ক চকোলেটে রয়েছে এল-আর্জিনিন এইচসিএল যা শুক্রাণুর সংখ্যা দ্রুত বাড়াতে সাহায্য করে।

১১.কলা

বিশেষজ্ঞদের মতে, পুরুষদের উর্বরতা শক্তি বৃদ্ধির জন্য কলা অত্যন্ত কার্যকরী। কলায় আছে ভিটামিন সি আর ভিটামিন বি-১ যা শুক্রাণুর কর্মক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে। তাই দেরি না করে নিয়মিত কলা খান।

এটি তেমন কোনো জটিল সমস্যা নয়, চিন্তিত না হয়ে ঘরোয়া পদ্ধতি তে এই সব খবর খেলেই মিলবে চটকদার সমাধান। পরিমিত ও স্বাস্থ্যকর খাবার , সুগঠিত জীবন যাপন এর মাধ্যমেই এই সমস্যা থেকে পরিত্রাণ পাওয়া সম্ভব।

আশা রাখছি আমার আজকের উপস্থাপন আপনাদের ভালো লেগেছে এবং একই সাথে আপনারা এর মাধ্যমে উপকৃত হয়েছেন। এই বিষয়ক কোনো মতামত/জিজ্ঞাসা থাকলে কমেন্ট করতে ভুলবেন না। আপনার মতামত এবং প্রশ্নের উত্তর দিতে আমরা সবসময় আছি। আজকের লেখা এই পর্যন্তই। সবাই ভালো থাকবেন , সুস্থ থাকবেন। ধন্যবাদ।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top