ছেলে- মেয়ে উভয় মানুষের জীবনে বেশ কয়েকটি ধাপ আসে। প্রথমে থাকে সে একজন শিশু এরপর কিশোর/কিশোরী তারপর সে হয় একজন পরিপূর্ণ যুবক/ যুবতী। এই সময় গুলোর মাঝে তাকে বিভিন্ন শারীরিক ও মানসিক পরিবর্তনের মাঝ দিয়ে যেতে হয়, আর এই পরিবর্তনশীল সময় কে বয়ঃসন্ধিকাল বলা হয়।মেয়েদের ক্ষেত্রে বয়ঃসন্ধিকালের গড় বয়স (৯-১৪) বছর।তবে এগুলো কোনো অস্বাভাবিক ব্যাপার নয় । ছেলে – মেয়েদের এ সম্পর্কে পর্যাপ্ত জ্ঞান না থাকায় তারা অস্থিরতা অনুভব করে , সমাজ ও পরিবার থেকে লুকিয়ে বেড়ায়।
আজ আমরা কথা বলবো মেয়েদের বয়ঃসন্ধিকালের অন্যতম পরিবর্তন “স্বপ্নদোষ নিয়ে । যা পরবর্তীতে যখন সে যুবতী তে পরিণত হয় তখন ও হতে পারে।
আচ্ছা আপনাদের কি মনে হয় , মেয়েদের ও স্বপ্নদোষ হতে পারে? নাকি শুধু ছেলেদের ই হয়?
এ বিষয়ে একটি বিতর্ক রয়েছে , আমি চেষ্টা করছি আপনাদের বিতর্ক কাটিয়ে একটি প্সুনিপুণ ধারণা দেওয়ার।আমরা বেশিরভাগ মানুষই জানি যে ছেলেদের কিশোর এবং তরুণ উভয় সময়েই স্বপ্নদোষ হয় যাকে ইংরেজিতে তে “ Wet Dream” অথবা “Nocturnal Emission” বলা হয়। তবে মেয়েদের ক্ষেত্রেও এর ব্যাতিক্রম নয়। মেয়েদের ও স্বপ্নদোষ হয়ে থাকে।
এবার আসি কেনো মেয়েদের স্বপ্ন দোষ হয় এই প্রসঙ্গে।
কেনো মেয়েদের স্বপ্নদোষ হয়?
![কেনো মেয়েদের স্বপ্নদোষ হয়?](https://cgdhaka.com/wp-content/uploads/2024/02/কেনো-মেয়েদের-স্বপ্নদোষ-হয়.jpg)
অনেক সময় সারারাত ধরে মাথায় যৌনতার চিন্তা আসতে থাকে , কখনও সেই যৌণ ভাবনায় সে তার ভাবনার সঙ্গী কে কল্পনা করে। ঠিক তখনই মাঝরাতে হঠাৎ ঘুম ভেঙে যায় কখনও উত্তেজনায় খুলে যায় অন্ত্রবাস ও নিম্নাঙ্গের পোশাকও। তখন সে তার যোনিপথে ভেজা অনুভব করে। কখনও ভিজে যায় বিছানার চাদরও।
ঘুমের মধ্যে যৌণ সঙ্গম দেখে “ভ্যাজাইনাল ডিসচার্জ”হয়। ঘুমের মধ্যে যৌণ ক্রীড়া দেখলে মস্তিষ্ক আপনার স্নায়ুতে সংকেত পাঠায়। তাই ঘুমের ঘোরে অবচেতনে মনে হয় যেনো আপনি নিজেই যৌণ সঙ্গম করছেন। মস্তিষ্কের এই সংকেত এর ফলে ভ্যাজাইনাল ওয়ালে রক্তপ্রবাহ বেড়ে যায় ।
আবার কখনও কখনও এর ফলে অর্গ্যাজম ও হতে পারে। তবে সবসময় অর্গ্যাজম হবে এমন কোনো কথা নেই।অর্গ্যাজম এর পরিবর্তে কখনও যৌণ আদ্রতায় ভিজে যায় অন্ত্রবাস। তবে সাধারণত বয়স বাড়ার সাথে সাথে এই সমস্যা কমে যেতে থাকে। এই স্বপ্নদোষ নিয়ে বিচলিত হবার কিছু নেই , এটি একটি স্বাভাবিক ঘটনা। হরমোনগত পরিবর্তনের ফলে বয়ঃসন্ধিতে এ সমস্যা দেখা দিতে পারে।
কি কারণে সাধারণত মেয়েদের স্বপ্নদোষ সমস্যা দেখা দেয় টা দেওয়া হলো।
১. বিশেষজ্ঞরা বলেন রাতে অতিরিক্ত যৌণ বিষয়ক চিন্তা থেকে স্বপ্নদোষ হয়।
২. অনেকেই রাতে একাকি পর্ণোগ্রাফী/ নীল ছবি দেখে আর সেই দৃশ্য তার মাথায় ঘুরতে থাকে আর এর ফলে এমনটা হয়।
৩.দীর্ঘদিন যৌনক্রীড়া থেকে বিরত থাকলেও এমন টা হতে পারে।
৪. শোবার সময় বিছানার সঙ্গে যৌনাঙ্গের ঘর্ষনের ফলে উত্তজনার সৃষ্টি হয় এবং এর জেরেও স্বপ্নদোষ সমস্যা দেখা দিতে পারে।
মেয়েদের স্বপ্নদোষ এর কারণ হিসেবে বিজ্ঞান কি কারণ কে দায়ী করে?
যৌণ উত্তেজনা , হরমোনের ওঠানামা ,যৌণ বর্জন,মানসিক কারণ,ঔষুধ বা পদার্থের গ্রহণ,স্নায়বিক কারণ। বিজ্ঞানের মতে এসব কারণে স্বপ্নদোষ এর সমস্যা দেখা দেয়।
অন্যদিকে,“দি ঢাকা পোষ্ট” পত্রিকার তথ্যমতে, এক গবেষণায় দেখা গেছে ৫ হাজার ৬২৮ জন নারীর মধ্যে প্রায় ৪০ শতাংশ নারী তাদের ৪৫ বছর বয়সের সময় কমপক্ষে একবার স্বপ্নদোষের অভিজ্ঞতা লাভ করেছেন , কিন্তু তার ধরণ হয়তো একটু ভিন্নতর। ঘুমের ভেতর যৌনতা বিষয়ক স্বপ্ন দেখার পর মেয়েদের পুরুষের মত বীর্য্যপাত হয় না ।কিন্তু তাদের যোনিতে যৌনরস এসে থাকে যার ফলে মেয়েদের যোনীদেশ ভিজে যায় । অপর এক গবেষণায় দেখা যায়, ৮৫ ভাগ মেয়েই তাদের ২১ বছর বয়সে একবার এই অভিজ্ঞতা লাভ করেছেন।
মেয়েদের স্বপ্নদোষ কমানোর জন্য যা যা করণীয়
- নিয়মিত বই পড়তে পারেন।
- অ্যাডাল্ট ফিল্ম , রোমান্টিক সিন দেখা ও বই পড়া থেকে বিরত থাকতে পারেন।
- প্রোডাক্টিভ কাজে মনোযোগী হতে পারেন।
- মন অন্যদিকে নেবার জন্য মাঝে মাঝে ঘুরতে যেতে পারেন।
- প্রতিদিন পর্যাপ্ত পরিমাণে সুষম খাবার খেতে পারেন।
- মেডিটেশন এর মাধ্যমে নিজের মন ও শারীরিক স্বাস্থ্য কে ভালো রাখতে পারেন।
- খুব বেশি প্রয়োজন বোধ করলে মনোরোগ বিশেষজ্ঞের সাথে পরামর্শ করে চিকিৎসা নিতে পারেন।
- আপনি প্রাপ্তবয়স্ক হলে পারিবারিক মতামত নিয়ে বিয়ে করতে পারেন । এতে আপনার সঙ্গীর সাথে যৌণ মিলন হলে আপনার শারীরিক চাহিদা মিটবে এবং আপনার স্বপ্নদোষ এর সমস্যাও কমে যাবে।
মেয়েদের স্বপ্নদোষ নিয়ে সমাজের ধারণা
![মেয়েদের স্বপ্নদোষ নিয়ে সমাজের ধারণা](https://cgdhaka.com/wp-content/uploads/2024/02/মেয়েদের-স্বপ্নদোষ-নিয়ে-সমাজের-ধারণা.jpg)
এখনো পর্যন্ত অনেক বিষয়েই মেয়েদের ক্ষেত্রে কম গুরুত্ব দেওয়া হয় , স্বাস্থ্যজনিত বিষয়েও এখনও কিছু ঘাটতি রয়েছে। বয়ঃসন্ধিকালের সব পরিবর্তনই স্বাভাবিক তবে এই সময়ে মেয়েরা এ ধরনের পরিবর্তনে ঘাবড়িয়ে যায় আর কারো সাথে কোনো কিছু বলতেও লজ্জা পায়। কিশোর বয়সে অনেকের এ স্বপ্নদোষের মত সমস্যা দেখা দেয় অনেক সময় নিজের অজান্তে যৌণ চিন্তা মাথায় আসে কারণ এটা সেই বয়সের জন্য সময়গত পরিবর্তন।
তবে খোলাখুলি ভাবে তারা তাদের সমস্যার কথা বলতে ইতোস্ত বোধ করে তাই তাদের ভেতর সমস্যা টা দিন দিন বেড়ে যায়। আমাদের সমাজে পুরুষের স্বপ্নদোষ নিয়ে বেশিরভাগই জানে কিন্তু মেয়েদের ও হতে পারে এটা তমন কেউ ধারণা রাখে না। আবার এটা নিয়ে বিপরীত চিন্তা পোষণ করে। কেউ মেয়েদের বুঝিয়ে বলে না , লজ্জাবোধ করায় কিংবা কোনো বই পত্রেও এই বিষয়টা খুব বেশি লেখা হয় না যা পড়ে মেয়েরা ধারণা নিবে। তাই আমি“মেয়েদের স্বপ্নদোষ হয় কিনা” এই বিষয়ে লিখে আপনাদের কিছু ধারণা দেওয়ার চেষ্টা করেছি।
আরো পড়ুন: মাসিকের কতদিন পর সহবাস করলে বাচ্চা হয়?
ঘণ ঘণ স্বপ্নদোষ হলে কি করবেন ?
যদিও স্বপ্নদোষ একটি স্বাভাবিক ঘটনা তবে অধিক মাত্রায় চলে গেলে চিন্তা না করে প্রথমে কিছু ঘরোয়া টোটকা নিতে পারেন । যেমন , মেডিটেশন বা অন্য রিলাক্সেশন এর মাধ্যমে নিজেকে চাঙ্গা রাখা , ঘরে অবসর সময়ে ক্রিয়েটিভ কাজ করতে পারেন ইত্যাদি। তবে অবস্থা বেশি খারাপ হলে যেমন ঘণ ঘণ স্বপ্নদোষ হলে প্রায়শই শারীরিক দুর্বলতা দেখা দিতে পারে। তাই এমন টা হলে সমস্যা না লুকিয়ে আর দেরি না করে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়াই হবে বুদ্ধিমানের কাজ।
তবে বিশেষজ্ঞদের কথা অনুযায়ী , পুরুষ মানুষের তুলনায় মহিলাদের স্বপ্নদোষের সমস্যার হার অনেক টাই কম । ফলে তাদের ক্ষেত্রে গুরুতর সমস্যা খুব কমই দেখা দিতে পারে।
শেষ কথা
সর্বোপরি আমি বলতে চেয়েছি যে , স্বপ্নদোষ খুবই স্বাভাবিক একটি সময়ের পরিবর্তন যা বেশিরভাগ ছেলে – মেয়ে উভয়ের মধ্যেই দেখা যায়। এতে লজ্জা না পেয়ে সচেতন হওয়া ও সচেতন করাই হবে যথাযথ সিদ্ধান্ত। ছেলেমেয়েদের এই বিষয়ে আনকম্ফরট্যাবল না করে ব্যাপারটিকে সহজ করা এবং পরিষ্কার জ্ঞান সরবরাহ করা ই হোক “স্বপ্নদোষ প্রতিরোধের” একমাত্র করণীয়।
আশা করি আমার লিখার মাধ্যমে আপনাদের “মেয়েদের স্বপ্নদোষ” সম্পর্কিত বিষয়ে পরিষ্কার ধারণা দিতে পেরেছি। আমি ভবিষ্যতে ছেলে ও মেয়ে উভয়ের স্বাস্থ্য সম্পর্কিত আরও প্রয়োজনীয় লিখা আপনাদের কে উপহার দেওয়ার চেষ্টা করবো। এছাড়াও উল্লিখিত বিষয়ের উপর কোনো জিজ্ঞাসা থাকলে কমেন্ট বক্সে আপনার প্রশ্ন/মতামত জানাতে ভুলবেন না । আমি চেষ্টা করবো আপনাদের প্রতিটি প্রশ্নের যথযথ উত্তর দেবার জন্য।ধন্যবাদ।