কামরস বা যোনিরস বের হবার কারণ কি ?

আপনার কি যৌনমিলন ছাড়াও যোনি থেকে তরল আঠালো বের হয়? আপনি কি মনে করছেন সাদস্রাব বের হবার কারণে আপনার স্বাস্থ্য দিন দিন কমে যাচ্ছে? 

আসলে এ নিয়ে দুশ্চিন্তার কিছু নেই। উত্তেজনার সময় বিশেষ গ্রন্থি (যোনি) এক ধরনের তরল রস উৎপন্ন করে পুরো যোনি মুখ ভিজে পিচ্ছিল করে। যৌন তৃপ্তি পেতে জয়েন্টে লুব্রিকেন্টের মতো কাজ করে এই যোনিরস। নারী-পুরুষের কাম সংঘটিত হওয়ার সময় এই রস উৎপন্ন হয় বিধায় একে কামরস ও বলা হয়। 

সৃষ্টির আদিকাল থেকেই যৌন বিষয়ে মানুষের আগ্রহের কমতি নেই। নারী-পুরুষের ভিন্নতা নির্ণয় হয় মূলত যৌনাঙ্গের গঠন দেখে। পুরুষের যেমন থাকে পেনিস তেমনই নারীর থাকে যোনি। এই বিষয়ে মানুষের কৌতুহল থাকলেও বরাবরই বিষয়গুলো জানতে ও বুঝতে অনেকে সংকোচবোধ করেন। সময়ের প্রয়োজনে যৌনতা নিয়ে স্পষ্ট তথ্য সমৃদ্ধ লিখা অনেকেই সার্চ করেন। 

আপনাদের হাতের নাগালে সহায়ক পরামর্শ পৌছানো আমাদের উদ্দেশ্য। এই আর্টিকেলে আপনি যোনিরস বিষয়ক এমনসব ধারণা পাবেন যা আপনার তথ্যভান্ডারকে করবে সমৃদ্ধ ও দুশ্চিন্তাকে জানাবে বিদায়৷

এই আর্টিকেলে যা যা থাকছে- 

  • যোনি
  • কামরস/ যোনিরস/ যোনিস্রাব 
  • মাসিক/ পিরিয়ড/ ঋতুচক্র
  • হস্তমৈথুন/ মাস্টারবেশন
  • যৌনমিলন/ সেক্স
  • সন্তান জন্মদান/ গর্ভধারণ
  • কিছু প্রশ্ন ও উত্তর
  • শেষকথা

যোনি

যোনি একজন নারীর শরীরের বিশেষ একটি অঙ্গ। এটি প্রজনন ও রেচনতন্ত্রের অংশ। যখন একজন ছেলে এবং একজন মেয়ে বিশেষ আলিঙ্গন করে, তখন ছেলেটি তার গোপনাঙ্গটি মেয়েটির গোপনাঙ্গের ভিতরে রাখে এবং তার বিশেষ তরল বাচ্চা তৈরি করতে সহায়তা করে। কখনও কখনও, মেয়েটির শরীর প্রতি মাসে একটি বিশেষ সময়ে তার গোপনাঙ্গ থেকে রক্ত ​​​​বের করে। যখন একটি শিশু বেরিয়ে আসার জন্য প্রস্তুত হয়, তখন এটি সাধারণত যোনিপথ দিয়ে বেরিয়ে আসে। 

যোনি হল মহিলাদের শরীরের একটি বিশেষ টিউব যা জরায়ু থেকে বাইরের দিকে যায়। এটা শুধু মানুষের মধ্যে নয়, ক্যাঙ্গারু, পাখি এবং সরীসৃপের মতো কিছু প্রাণীতেও থাকে। এমনকি পোকামাকড়ের শরীরেও একটি অংশ থাকে যাকে যোনি বলা হয়। 

কামরস/ যোনিরস/ যোনিস্রাব

ভিন্ন তিনটি নাম হলেও কামরস/যোনিরস/যোনিস্রাব মূলত একটাই। তরল, কোষ এবং ব্যাকটেরিয়ার মিশ্রণ যা যোনিকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে তাই যোনিরস। যখন একজন নারী উত্তেজিত বোধ করে এবং সহবাস করে তখন তার যোনির চারপাশে রক্তনালীগুলি বড় হয় এবং আরও তরল তৈরি হয়। এতে যোনির দেয়াল আরও তরল হয়ে ফুলে ওঠে এবং ভিজতে থাকে। এটির রঙ, পরিমাণ ও মিশ্রণ এবং বিভিন্ন বয়সে বিভিন্ন রকম হতে পারে। তবে স্বাভাবিক স্রাব সাধারণত পরিষ্কার বা সাদা হয় এবং এর তীব্র গন্ধ থাকে না। কখনও কখনও স্রাবের পরিবর্তন হয় যদি এটিতে ব্যাকটেরিয়ার আক্রমণ হয়। অস্বাভাবিক স্রাবের রং ভিন্ন হতে পারে, দুর্গন্ধ হতে পারে, চুলকানি বা ব্যথা হতে পারে।

একজন নারীর বিভিন্ন বয়সে যোনিরসের প্রকৃতি বিভিন্নরকম হয়ে থাকে। কখনো পাতলা কখনো গাঢ়, কখনো কমে কখনো বাড়ে। নারীদেহটিতে এইযে পরিবর্তন ঘটে এটিই স্টেজ আকারে উপস্থাপন করা হলো নিম্নে-

পেডিয়াট্রিক

মেয়েরা বয়ঃসন্ধিতে পৌঁছানোর আগে তাদের যোনিপথ পাতলা হয় এবং বিভিন্ন ধরনের ব্যাকটেরিয়া থাকে। মূলত বয়ঃসন্ধির পূর্বের সময়টাকে পেডিয়াট্রিক হিসেবে কাউন্ট করা হয়। 

বয়ঃ সন্ধি

বয়ঃসন্ধির সময়, ডিম্বাশয় ইস্ট্রোজেন হরমোন তৈরি করতে শুরু করে। এমনকি ঋতুস্রাবের আগে যখন স্তন বড় হওয়া শুরু করে, যোনি স্রাবের পরিমাণ বৃদ্ধি পায় এবং গঠন ও ঘনত্বের পরিবর্তন ঘটে। 

গর্ভাবস্থা

গর্ভাবস্থায়, মেয়েদের শরীরে ইস্ট্রোজেন এবং প্রোজেস্টেরনের পরিমাণ বৃদ্ধি পায়, যা যোনিপথের নিঃসরণও বাড়ায়। এই স্রাব সাধারণত সাদা বা হালকা ধূসর এবং টক গন্ধ থাকতে পারে। গর্ভাবস্থায়, যোনিপথে সাধারণত রক্ত ​​থাকে না।

মেনোপজ

একটি নির্দিষ্ট বয়সের পর (৪৫ থেকে ৫৫ বছর পর্যন্ত), মাসিক চক্র চিরতরে বন্ধ হয়ে যায়। একে মেনোপজ বলে। যদি কারও ১২ মাসের বেশি সময় ধরে পিরিয়ড/পিরিয়ড বন্ধ থাকে তাহলে মেনোপজ বিবেচনা করা হয়। একজন মহিলার ডিম্বাশয় মেনোপজের সময় ডিম উৎপাদন বন্ধ করে দেয় এবং সন্তান উৎপাদন তখন আর সম্ভব হয়ে উঠেনা। 

মাসিক/ পিরিয়ড/ ঋতুচক্র

পিরিয়ড/ মাসিক/ মিনস/ ঋতুস্রাব/ মেন্সট্রুয়াল সাইকেল সম্পূর্ণ ন্যাচারাল একটি বিষয়। সঠিক এবং স্পষ্ট ধারণার অভাবে অনেক নারীকে অস্বস্তিকর এবং বিব্রতকর পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যেতে হয় এই সময়টাতে। 

প্রতিমাসে একটি নির্দিষ্ট সময় পর (২৮ দিন) মেয়েদের জরায়ু হরমোনের প্রভাবে যে পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যায় এবং যেটির ফলে রক্ত মিশ্রিত এক ধরণের বিশেষ রস বের হয়ে আসে তাকেই মাসিক বা ঋতুচক্র বলা হয়। 

তিনটি ধাপে এটি হতে পারে যেটি ফেজ হিসেবে পরিচিত। 

১) মেন্সট্রুয়াল ফেজ- ৪ দিন স্থায়ী হয় (৪-৭ দিন)

২) প্রলিফারেটিভ ফেজ- ১০ দিন স্থায়ী হয় (৮-১০ দিন)

৩) সেক্রেটরি ফেজ- ১৪ দিন স্থায়ী হয় (১০-১৪ দিন)

হস্তমৈথুন/ মাস্টারবেশন

হস্তমৈথুন মাস্টারবেশন

যৌন তৃপ্তি বা আনন্দের জন্য যৌনাঙ্গ বা শরীরের অন্যান্য সংবেদনশীল অংশ স্পর্শ করাই হস্তমৈথুন। আনন্দ উপভোগ করার, নিজের শরীরকে জানার এবং মানসিক উত্তেজনা থেকে মুক্তি পাওয়ার একটি স্বাস্থ্যকর এবং নিরাপদ উপায়। নর-নারী উভয়েই এই আনন্দ উপভোগ করে।  প্রাপ্তবয়স্কদের সমীক্ষা অনুসারে, প্রতি মাসে ২৭ থেকে ৪০ শতাংশ মহিলা এবং ৪১ থেকে ৬৫ শতাংশ পুরুষ হস্তমৈথুন করার কথা স্বীকার করেছেন।

তবে অত্যধিক বা বাধ্যতামূলক হস্তমৈথুন কখনও কখনও বিপজ্জনক হতে পারে বা অন্যান্য মানসিক সমস্যার কারণ হতে পারে। হস্তমৈথুন একটি আনন্দদায়ক, স্বাভাবিক এবং স্বাস্থ্যকর বিষয়। এটি মস্তিষ্ককে প্রভাবিত করে এবং বিভিন্ন প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে। হস্তমৈথুনের ফলে পুরুষের পেনিস ও নারীর যোনি থেকে কামরস নির্গত হয়ে থাকে৷ 

যৌনমিলন/সেক্স

নর-নারীর মাঝে স্বাভাবিক যৌন আচরণ যেটির মাধ্যমে উভয়ে পরম তৃপ্ত হতে পারে। বৈবাহিক জীবনে এটি নিরাপদ ও বৈধ বলে বিবেচিত হয়। পুরুষের জনন অঙ্গ যখন নারীর জনন অঙ্গে প্রবেশ করে তখন এটিকে যৌনমিলন বা সেক্স নামে ডাকা হয়৷ এবিষয়ে প্রচণ্ড কৌতুহল থাকলেও যৌন মিলনের নির্দিষ্ট সময়সীমা নেই। ৫-৭ মিনেটের মধ্যেও অনেক নারীকে তৃপ্ত করা যেতে পারে। এটি উভয়ের মানসিক অবস্থার উপর নির্ভর করে।

যৌনসঙ্গমকালে স্ত্রীর যোনিতে পুরুষের বীর্য (কামরস) নিক্ষেপের ফলে গর্ভসঞ্চার হয়। প্রজননের ইচ্ছা না থাকলে দম্পতি অনেকসময় বীর্যের কার্যকারিতা নষ্ট করার জন্য কনডম বা জন্মনিরোধক পিল ব্যবহার করেন। ফলে যৌনবাহিত রোগ থেকেও তারা নিরাপদ থাকেন। 

আরো জানুন: সত্যি কি মেয়েদের স্বপ্নদোষ হয় ?

সন্তান জন্মদান/ গর্ভধারণ

মাতৃদেহে গর্ভধারণ হয় শুক্রানু ও ডিম্বানু একসাথে মিলিত হয়ে নিষিক্ত হয়ে। আরও সহজ ভাষায়, পুরুষ ও মহিলার যৌনরস যখন মহিলার গর্ভে মিলিত হয় তখন থেকেই গর্ভধারণ প্রক্রিয়া শুরু হয়। এটি কয়েকঘন্টা বা কয়েকদিন সময় নিয়ে থাকে৷ 

অনেকগুলো পদক্ষেপের সমষ্টি হল সন্তান জন্মদান। এটি মাসিকের সাথে সরাসরি সম্পর্কিত। মূলত মাসিক চলাকালীন স্ত্রীগর্ভ অনেকবেশি উর্বর থাকে। ফলে ঐসময়টাতে কনসিভ করা সহজ হয়। 

২৮ দিনের মাসিক চক্রে গর্ভাবস্থার কোর্সটি নিম্নরূপ:

  • ১ম দিন : আপনার মাসিকের প্রথম দিন।
  • ১৪ তম দিন: ডিম্বস্ফোটন ঘটে।
  • ডিম্বস্ফোটনের ২৪ ঘন্টার মধ্যে: শুক্রাণু ডিমকে নিষিক্ত করে (গর্ভাবস্থা ঘটে)।
  • গর্ভধারণের প্রায় ৬ দিন পর: জরায়ুর আস্তরণে নিষিক্ত ডিম ইমপ্লান্ট হয়।
  • প্রায় ২১ দিন: এই মাসিক চক্রের সময় যদি নিষিক্তকরণ এবং ইমপ্লান্টেশন ঘটে তবে আপনি গর্ভবতী। তবে গর্ভাবস্থার পরীক্ষা পজিটিভ হতে আরও ৫-৭ দিন সময় লাগতে পারে।

কিছু প্রশ্ন ও উত্তর

i. যৌনাঙ্গে দুর্গন্ধ হলে সমাধান কী?

খুব ভালোভাবে গোপন /অঙ্গের যত্ন নিন। সর্বদা পরিষ্কার থাকুন। ভাল অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল সাবান ব্যবহার করুন। গোপন অঙ্গে অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল ও সুগন্ধী পাউডার ব্যবহার করুতে পারেন। তবে পারফিউম ব্যবহার না করাই ভাল।

টাইট অন্তর্বাস পরবেন না। গোপন অঙ্গে দুর্গন্ধ হলে ঢিলেঢালা পোশাক পরাই উচিত। ভাল কোম্পানির স্যানিটারি ন্যাপকিন ব্যবহার করুন। পিরিয়ডের সময় নিজেকে বাড়তি পরিছন্ন রাখুন।

ii. যোনিরস বের না হওয়ার কারণ কী?

যোনিরস বের না হওয়া একটি কারণ হতে পারে যখন একটি ভাইরাস প্রথমবারের মতো বা সম্পূর্ণ নতুন অর্থাৎ মানুষের শরীরে একটি নিরম্ভিত প্রতিক্রিয়া উত্পন্ন না করলে। যদি ভাইরাসের সাথে পূর্বে মানুষের শরীরে তৈরি হওয়া অণুজীবাণুর সাথে ক্ষমতা তৈরি হয়, তবে সেই ক্ষমতার জন্য শরীরটি যোনিরাসের বিরুদ্ধে রোগী হতে পারে।

iii. যোনির ভেতরে বীর্যপাত হলে করণীয় কী?

মেয়েদের প্রস্রাব করার জায়গার নিচে একটা ছিদ্র থাকে। যাকে জরায়ু বলে। এই ছিদ্রের ভিতরে পুরুষ মানুষ সেক্সের সময় নিজের পেনিস প্রবেশ করায় এবং উপর নিচ করে। একে সেক্স করা বুঝায়। এই ছিদ্রের ভিতরে কিছু পড়া মানে সেটা নারীর জরায়ুর ভিতরে চলে যাওয়া। পুরুষের বীর্য বা সাদা পানি যদি এই ছিদ্রের ভিতরে চলে যায় কোনোভাবে, সেটা সেক্সের মাধ্যমে হোক বা যে কোনোভাবেই হোক তাহলে মেয়েটি গর্ভবতী হয়ে যেতে পারে। রিস্ক সব সময়ই থাকে। এমনকি পেনিস দিয়ে যেই পিচ্ছিল পানির মতো কামরস বের হয় সেটা যদি মেয়ের সেই ছোট ছিদ্রের ভিতরে চলে যায় তাহলেও বাচ্চা হওয়ার ঝুঁকি থাকে। 

আপনি যদি নিয়মিত যৌন মিলন করেন তবে বিষয়টি সম্পর্কে স্পষ্ট ও পরিপূর্ণ তথ্য আপনাকে অধিক আত্মবিশ্বাসী করে তুলবে। স্বাস্থ্যকর ও নিরাপদ যৌনজীবন সকলের কাম্য।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top