অতিরিক্ত স্বপ্নদোষ হলে কি সমস্যা হয় ?

আজকে আমাদের আলোচনার মূল বিষয়বস্তু হচ্ছে অতিরিক্ত স্বপ্নদোষ হলে আমাদের কি কি সমস্যা হতে পারে। তাহলে চলুন আমরা মূল আলোচনায় চলে যাই। স্বপ্নদোষ কি? স্বপ্নদোষ হচ্ছে শরীরের একটি স্বাভাবিক ও সাধারণ পরিবর্তন। যা প্রতিটি মানুষের জীবনেই এসে থাকে। একটি নির্দিষ্ট বয়সসীমার পর তারা এই সমস্যা উপলব্ধি করতে পারে। তবে আমরা এটাকে সমস্যা বলে স্বীকৃতি দিলেও এটা মোটেই কোনো সমস্যা না। তবে , এখানে একটা কথা আছে । যদি একটি নির্দিষ্ট মাত্রার থেকে বেশি পরিমাণে ঘন ঘন স্বপ্নদোষ হয় তাহলে এটি তখন সমস্যায় রূপ নেয়।

কখন স্বপ্নদোষ হতে পারে, তবে এটি কি কোন সমস্যা ?

হঠাৎ কখনও রাতে ঘুমের ঘোরে অচেতন অবস্থায় যৌণ উত্তেজনার ফলে লিঙ্গ থেকে বীর্য্যপাত হয়। অনেকেই এ সম্পর্কে অবগত না হওয়ার কারণে এই ধরণের ঘটনায় ঘাবড়ে যায়। মানসিক ভাবে দুর্বল হয়ে পরে। অনেক সময় পরিবারের মানুষের সাথেও কথা বলতে লজ্জাবোধ করে। বয়সের সাথে সাথে শারীরিক ও আচরনগত পরিবর্তন হওয়ার কারণে তাদের মধ্যে এ ধরনের পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায়।

তবে এটি কোনো শারীরিক সমস্যা না। তবে আবারো বলছি অতিরিক্ত মাত্রায় হলে এটি সমস্যার কারণ হতে পারে। মানুষ বেড়ে ওঠার সাথে সাথে নানা ধরনের পরিবর্তন তার ভেতর লক্ষ্য করা যায়। তাই বেড়ে উঠতে উঠতে মানুষ যখন তার যৌবনকাল অতিবাহিত করতে থাকে শরীরের সাথে সম্পৃক্ত চাহিদা তার মানসিক প্রয়োজনীয়তায় রূপ নেয়।

এ সময় তার সঙ্গীর প্রয়োজনীয়তা অনুভব হতে পারে , কাউকে কল্পনায় ভেবে হয়তো সে তার চাহিদা মেটাতে পারে। যেমন , হস্তমৈথুন করে , পর্ণোগ্রাফী বা নীল ছবি দেখে। কেউ কেউ হয়তো বা  অনৈতিক ও অসত কাজ ও করতে পারে। তবে আমাদের এই বিষয়ে সচেতন হতে হবে। প্রয়োজন হলে চিকিৎসকের সান্নিধ্যে যেতে হবে। এবার আসি আমাদের মূল বিষয়ক আলোচনায়।

অতিরিক্ত স্বপ্নদোষ হলে কি কি সমস্যা হয়?

অতিরিক্ত স্বপ্নদোষের ফলে বেশ কয়েক প্রকার সমস্যাই হতে পারে। যা শরীরের পক্ষে খুব একটা সুখকর নয়। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে কখন এ ধরনের সমস্যা বেশি হয়?  এ সমস্যা তখনই বেশ গুরুতর অবস্থা ধারণ করে যখন একজন পুংলিঙ্গের পেশির বা স্নায়ুর দুর্বলতা থাকে। আবার অতীতে ঘটে যাওয়া কোনো ঘটনা যেমন অত্যাধিক হস্তমৈথুন,বীর্যের স্বাভাবিক ঘনত্ব কমে যাওয়াএছাড়াও হরমোনাল সমস্যার কারণেও অতিরিক্ত স্বপ্নদোষ হতে পারে।তবে,বীর্যের মাত্রা যখন বেশি হয়ে যায় তখন তার পক্ষে তা ধরে রাখা কঠিন এবং গভীর রাতে এর ফল হিসেবে স্বপ্নদোষ হয়।অত্যাধিক বীর্যপাতের ও স্বপ্নদোষের ক্ষেত্রে, একজন পুরুষ শরীর অনেক ধরেনের সমস্যার শিকার হতে পারে।

সমস্যা গুলো হলো –

  • ঘুম না আসা
  • শারীরিক দূর্বলতা
  • স্মৃতিশক্তি হারিয়ে ফেলা
  • চোখে দেখতে বিলম্ব হওয়া
  • হাঁটুর ব্যাথা
  • দূর্বল যৌণ ক্ষমতা
  • বন্ধাত্ব
  • লিঙ্গ শিথিলতা
  • শারীরিক ধকল
  • কিছু বিরল ক্ষেত্রে , বীর্যের সাথে মূত্রত্যাগও হতে পারে।

এইসব সমস্যা অত্যাধিক স্বপ্নদোষের জন্য হতে পারে। ছোট্ট করে বর্ণনা দেই জ এই ধরনের সমস্যা গুলো আপনার শরীরে দেখা দিলে কি কি ধরনের লক্ষণীয় পরিবর্তন আপনার জীবনে আসতে পারে। ধরুন, আপনার অতিরিক্ত স্বপ্নদোষের ফলে রাতে ঘুম আসছে না স্বাভাবিক ভাবেই আপনার মেজাজ খিটখিটে থাকবে। পরদিন কোনো কাজে আপনার মন বসবে না , সারাদিন অগোছালো ভাবে কাটাতে হবে। বাড়ির সবার সামনে আপনাকে একটা সুস্থ ভাব নিয়ে থাকতে হবে। শারীরিক দুর্বলতার কথা আরও গুরুতর । শরীরে শক্তি না পেলে কোনো কাজই করতে ভালো লাগে না , শরীরে উথফুল্ল ভাব কাজ করে না।

দুর্বল যৌণ ক্ষমতাও একটি অন্যতম সমস্যা। কেননা আপনি প্রাপ্তবয়স্ক হবার পর সঙ্গীর সাথে শারীরিক সম্পর্ক করা কালীন আপনি বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হতে পারেন । যার জন্য আপনার দাম্পত্য জীবনে কোলাহল সৃষ্টি হতে পারে। যা আপনার মানসিক শান্তি কেড়ে নেবার জন্য যথেষ্ট।

স্বপ্নদোষ সম্পর্কিত কিছু তথ্য উপাত্ত জেনে নেই।

অতিরিক্ত স্বপ্নদোষের ফলে যে সমস্যাটি অনেকাংশেই ভয়াবহ টা হলো বন্ধাত্ব। প্রথম আলো পত্রিকার তথ্যমতে ,বন্ধাত্বের ক্ষেত্রে ৪০ শতাংশ নারী এবং ৪০ শতাংশ পুরুষ দায়ী। অন্যদিকে, “নিউস ভিউ বিডি” নামে একটি অনলাইন পত্রিকার ভাষ্যমতে,পুরুষের বন্ধাত্বের সমস্যার কারণে প্রায় ৪০-৫০ শতাংশ দম্পতি সন্তানহীন। এ সকল তথ্য দেখলে বুঝতে পারবেন যে বন্ধাত্ব খুবই দুঃখজনক সমস্যা যা অতিরিক্ত স্বপ্নদোষের কারণেও হতে পারে।

স্বপ্নদোষ রোধ করার জন্য এর প্রতিকার গুলো কি কি?

  • প্রথমত আপনি জরুরীভাবে ডাক্তার এর শরণাপন্ন হতে পারেন।
  • অতিরিক্ত হস্তমৈথুন থেকে বিরত থাকতে হবে।
  • পর্ণোগ্রাফী কিংবা নীল ছবি দেখা বন্ধ করতে হবে।
  • ধ্যান কিংবা মেডিটেশনের মাধ্যমে নিজেকে আয়ত্বে আনতে পারেন।
  • ব্যায়াম এবং যোগাসন শরীর , মন ও মস্তিষ্কের ওপর নিয়ন্ত্রণ রাখতে সহায্য করে।
  • খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন আনতে হবে , সুষম খাবার গ্রহণ করতে হবে।
  • লাউ এর মত ঠান্ডা জাতীয় সবজি শরীর কে গরম হতে দেয় না এটি স্বপ্নদোষ কমাতে সহায়ক হতে পারে।
  • পেঁয়াজ এবং রসুন শারীরিক নানারকম অসুস্থতা সরিয়ে তোলার মত ক্ষমতা রয়েছে বলে জানা যায়। তাই ৩ থেকে ৪ কোয়া কাঁচা রসুন ও পেঁয়াজ স্যালাড হিসেবে খেলে স্বপ্নদোষ কম যেতে পারে।
  • এছাড়াও বিশেষ প্রয়োজন হলে আপনি সেক্সোলজিস্টের কাছে পরামর্শ নিতে পারেন।

শেষ কথা

এইসব হচ্ছে অতিরিক্ত স্বপ্নদোষ থেকে রক্ষা পাওয়ার উপায়। আশা করছি এই সব প্রতিকার আপনার সমস্যার সমাধানে সাহায্য করবে। সবশেষে আমি বলতে চাই , স্বপ্নদোষ একটি স্বাভাবিক শারীরিক পরিবর্তন এটি কোনো ব্যাধি না । এ বিষয়ে চিন্তিত হয়ে মাথায় চাপ সৃষ্টি করা নেহাৎ বোকামি। তবে অতিরিক্ত মাত্রায় হলে উপরে উল্লেখিত প্রতিকার গ্রহণ করলে প্রতিরোধ করা সম্ভব । সমস্যা থাকলে সমাধান ও রয়েছে এটি ভুলে গেলে চলবে না ।

আজকের বিষয় এর লিখা এ পর্যন্তই। আশা করি সবার ভালো লেগেছে। আমার একমাত্র উদ্দেশ্য ছিল সমস্যা শনাক্ত করে এর ব্যাপারে ধারণা দেওয়া এবং চিন্তিত না হয়ে এর প্রতিকার সম্পর্কে সচেতন করা। আমি চেষ্টা করেছি এ সম্পর্কিত পরিষ্কার ধারণা দেবার এবং আশা রাখছি সবাই বিষয়টি পড়ে উপকৃত হয়েছেন । পরবর্তী স্বাস্থ্য বিষয়ক সকল কন্টেন্ট এর জন্য অপেক্ষা করুন। এ পর্যন্ত ভালো থাকবেন, সুস্থ থাকবেন এবং স্বাস্থের প্রতি সচেতন হবেন। ধন্যবাদ।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top